বিবাহ ও ইসলাম -১

(উৎসর্গ: যারা বিবাহের ইচ্ছা করেছেন কিন্তু পারিপার্শ্বিক সমস্যার কারণে এখনও করে উঠতে পারেন নি।)

images1

মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন,
يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي تَسَاءَلُونَ بِهِ وَالْأَرْحَامَ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا (১)
অর্থ: “হে মানুষ, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক উৎস থেকে। আর তা থেকে তোমাদের স্ত্রীদেরকেও সৃষ্টি করেছেন। এরপর তা থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে চাও। আর ভয় কর রক্ত-সম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর পর্যবেক্ষক।” (সূরা নিসা, আয়াত ০১)
এই আয়াত দ্বারা বুঝা যাচ্ছে প্রাকৃতিক ও আনুষঙ্গিক প্রয়োজন পূরণের জন্য নারী পুরুষ বিবাহের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে একটি পবিত্র সম্পর্কের বাঁধনে যুক্ত হয়।

বিবাহের আরবি শব্দ হল নিকাহ। নিকাহ এর শাব্দিক অর্থ হল, একত্রিত হওয়া, নারী পুরুষ মিলিত হওয়া। পারিভাষিক অর্থে নিকাহ বা বিবাহ বলা হয়,
اى حل استمتاع الرجل من المرأة
বিবাহ হচ্ছে এমন একটি চুক্তি, যার মাধ্যমে নারী-পুরুষ শারীরিকভাবে একে অপরের সাথে মিলিত হওয়া বৈধ হয়। অর্থাৎ প্রাপ্ত বয়স্ক নারী-পুরুষ পরস্পরে নিজেদের দৈহিক ও প্রাসঙ্গিক চাহিদা পূরণের জন্য সমাজ ও ধর্ম স্বীকৃত বৈধ পন্থার নামই হচ্ছে বিবাহ।

ইসলামী শরীয়ত অনুসারে বিবাহের রুকন বা মূল স্তম্ভ হচ্ছে দু’টি। ১. ইজাব তথা প্রস্তাব, ২. কবুল, বা গ্রহণ। এর জন্য আবশ্যকীয় শর্ত হচ্ছে সাক্ষী থাকা। মহরানা ধার্য করা ওয়াজিব।

বিবাহের ফজিলত:
وعن أنس قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : ” إذا تزوج العبد فقد استكمل نصف الدين فليتق الله في النصف الباقي ”
অর্থ: “হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, যখন কোন ব্যক্তি বিবাহ করে, তখন সে যেন তার অর্ধেক ঈমানকে পূর্ণ করে ফেললো। এখন বাকি অর্ধেকের ব্যাপারে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে।” (মিশকাত শরীফ: হাদিস নং ৩০৯৭)
বিবাহের মাধ্যমে মানুষ তাদের প্রাকৃতিক চাহিদা বৈধ পন্থায় পূরণ করে। পারিবারিক জীবনে প্রশান্তি লাভ করে। ইরশাদ হয়েছে:
هُوَ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَجَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا لِيَسْكُنَ إِلَيْهَا
অর্থ: তিনিই সে সত্তা যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক ব্যক্তি থেকে এবং তার থেকে বানিয়েছেন তার সঙ্গিনীকে, যাতে সে তার নিকট প্রশান্তি লাভ করে।” (সূরা আরাফ, আয়াত ১৮৯)

বিবাহের মাধ্যমে দুটি পরিবারের মধ্যে আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। নারী পুরুষের ইজ্জত-সম্ভ্রম হিফাজত হয়। পারিবারিক শান্তি ও সুন্দর জীবন লাভ করা যায়। এছাড়াও বিবাহের মাধ্যমে সামাজিক পর্যায়ে অনেক সুফল পাওয়া যায়। এজন্যই মহানবী সা. স্ত্রীর ভরণ-পোষণ দিতে সক্ষম সকল যুবককে বিবাহের নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হচ্ছে:
عن عبد الله بن مسعود قال لنا رسول الله صلى الله عليه و سلم ( يا معشر الشباب من استطاع الباءة فليتزوج فإنه أغض للبصر وأحصن للفرج ومن لم يستطع فعليه بالصوم فإنه له وجاء )
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, মহানবী সা. বলেছেন, হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যারা স্ত্রীদের ভরণ-পোষণের সক্ষমতা রাখে তারা যেন বিয়ে করে ফেলে। কেননা এটা চোখের প্রশান্তি দানকারী ও লজ্জা স্থানের হিফাজত কারী। আর যারা স্ত্রীদের ভরণ-পোষণের সামর্থ্য রাখে না, তারা যেন রোজা রাখে, কেননা এটা তাদের উত্তেজনাকে হ্রাস করবে।” (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ৪৭৭৮)

বিবাহের হুকুম:
যদি শারীরিক এবং আর্থিক সক্ষমতা থাকে এবং বিয়ে না করলে গুনাহে লিপ্ত হওয়ার নিশ্চিত সম্ভাবনা দেখা দেয় তাহলে এমতাবস্থায় বিয়ে করা ফরজ।
যদি শারীরিক ও আর্থিক সক্ষমতা থাকে, কিন্তু বিয়ে না করলে গুনাহের আশংকা না থাকে তাহলে এমন অবস্থায় বিয়ে করা সুন্নত।
যদি আর্থিক সক্ষমতা থাকে কিন্তু শারীরিক সক্ষমতা না থাকে যেমন অসুস্থ বা বয়স্ক ব্যক্তি, এমতাবস্থায় বিয়ে করা মাকরূহ। কারণ এর ফলে স্ত্রীর হক আদায় হবে না।
যদি কেবল শারীরিক সক্ষমতা থাকে, আর্থিক সক্ষমতা নেই তাহলে এমতাবস্থায় বিয়ে না করে রোজা রাখা উত্তম এবং আর্থিক সক্ষমতার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা সুন্নত। (আর্থিক অক্ষমতার অর্থ ব্যক্তির নিজের খাবার ও বাসস্থানের অনুরূপ স্ত্রীর জন্য ব্যবস্থা করতে না পারা।)

সবচেয়ে বেশী বরকত পূর্ণ ও উত্তম বিবাহ:
وعن عائشة قالت : قال النبي صلى الله عليه وسلم : ” إن أعظم النكاح بركة أيسره مؤنة ” . رواهما البيهقي في شعب الإيمان
অর্থ: হযরত আয়শা রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সা. বলেছেন, “নিশ্চয়ই সবচেয়ে বেশি বরকত ও কল্যাণময় বিবাহ হচ্ছে সেটি, যেখানে খরচ কম হয় (অহেতুক খরচ হয় না)।” (বায়হাকী, ঈমান অধ্যায়)

আমাদের আজকের সমাজের একটি দু:খ জনক বাস্তবতা হল:
আমরা বিবাহকে নানাবিধ অহেতুক খরচের বেড়াজালে বন্দী করে তাকে একটি বিভীষিকাময় কর্মযজ্ঞে পরিণত করেছে। এখন বিয়ের নাম নিতে গেলেই আগে লাখ লাখ টাকার বান্ডিল হাতে রাখতে হবে। যার কারণে লক্ষ লক্ষ যুবক আজ বিবাহের নাম নিতেও ভয় পায়। এভাবে অনৈসলামিক আর অপ-সাংস্কৃতিক কালচার আমাদের যুব সমাজকে বিবাহের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করছে। ইসলাম যেখানে বালেগ হওয়া এবং নুন্যতম আর্থিক সঙ্গতি থাকলে বিবাহের অনুমতি দিয়েছে সেখানে আমাদের সমাজ এখন বিবাহের ক্ষেত্রে মেয়েদের জন্য ২০ বছর এবং ছেলেদের জন্য ক্যারিয়ার গঠন নামক শর্তের বেড়াজালে ৩০/৩৫ বছরের অলিখিত শর্তারোপ করে করেছে। কিছুদিন যাবত টেলিভিশনে প্রচারিত একটি কোম্পানির বিজ্ঞাপনও এই থিউরি সম্প্রচার করছে। বলা হচ্ছে, বিবাহে তো অনেক খরচ, তার চেয়ে বড় মোবাইল কিনে প্রেম করেন, আর ফাও টাকা ওড়ান।

অথচ এর বহু আগেই ছেলে মেয়ে বালেগ ও প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে যায়। আমাদের বর্তমান সমাজে একটি তরুণ-তরুণীর সামনে অন্যায়-অশ্লীলতায় লিপ্ত হওয়ার সকল উপায়-উপকরণ খুবই সহজলভ্য। কিন্তু বিবাহ দুরূহ। যার কারণে যিনা-ব্যভিচারের বিস্তৃতি ঘটছে। পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণে আমাদের রাষ্ট্র ও বহুজাতিক কোম্পানি গুলো অব্যাহত প্রচেষ্টায় এমন একটা অবস্থা সৃষ্টি করেছে, যেখানে যুবক-যুবতীদের বিবাহ বহির্ভূত প্রেম-ভালোবাসা আর যিনা-ব্যভিচার খুব সহজ একটা বিষয় হয়ে গেছে। কিন্তু ধর্ম ও সমাজ স্বীকৃত বৈধ বিবাহকে দেয়া হয়েছে নির্বাসন। তাই দিন যত যাচ্ছে, যিনা-ব্যভিচার, ইভ টিজিং ও নারী নির্যাতন ততই বেড়ে চলছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বিবাহকে সহজ ও সাবলীল করার বিকল্প নেই।

চলবে…
পরের পোষ্ট পড়তে এখানে ক্লিক করুন:
বিবাহ না ব্যভিচার : কিসে নারীর উপকার? (বিবাহ ও ইসলাম -২)

লিখেছেনঃ মাই নেইম ইজ খান

তারিখঃ  ১০ ই মে, ২০১১ দুপুর ২:৫১

Leave a comment